গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন, ঝালকাঠি ॥ কোন কিছুতেই থামছেনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক(ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা আঃ সালাম ও ঝালকাঠি গ্রেড-১ এলএসডি সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা গাজী মাজাহারুল আনোয়ার আর ঝালকাঠি ফুডসহ খাদ্যগোডাউনের অঘোষিত নিয়ন্ত্রকের নেতৃত্বাধীন দূর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটটি। ঝালকাঠি সদরের ৭টি ভূয়া-রাইচ মিল দেখিয়ে ১৫শ ৯২মে.টন আমন ধান খুলনা-বাগেরহাটে পাচার করে এখোন নিন্মমানের পচা লাল চাউলকে ছাটাইকৃত আমন চাউল দেখিয়ে খাদ্য গোডাউনে সরবরাহ করা হচ্ছে। গত ৩ জুলাই শুক্রবার এ সিন্ডিকেট চক্র ট্রাক বোঝাই পচা লাল চাউল খাদ্য গোডাউনে সরবারহ করার সংবাদে ঘটনাস্থলে গেলে তারা সটকে পরে ও শনিবার ভোর ৬টা থেকে কোন প্রকার ঝাচাই-বাছাই, পরিমাপ ও প্রত্যয়নপত্র ছাড়াই ঝালকাঠি গ্রেড-১ এলএসডি সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা গাজী মাজাহারুল আনোয়ারের মাধ্যমে ৩নং গোডাউনে উত্তোলন করে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক(ভারপ্রাপ্ত)কর্মকর্তা আব্দুস সালাম ও খাদ্য গুদাম সংরক্ষক(এলএসডি) ও এক পরিবহ ঠিকাদারের মিলিত শক্তিশালি সিন্ডিকেট সরকারের আমন ধান সংগ্রহ, ছাটাই ও সংরক্ষনসহ প্রতিটি স্তরে দূর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি ৮০ লক্ষাধিক টাকা লুটে নিচ্ছে। প্রভাবশালী এ সিন্ডিকেটের লুটপাটের বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশ করলে, জেলা প্রশাসন এসকল দূর্নীতির ব্যাপারে ইতিমধ্যে হস্তক্ষেপ শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানাগেছে, জেলা খাদ্য বিভাগ চলতি বছর সরকারের সংগৃহীত ১৫শ ৯২ মে.টন আমন ধান তাদের দপ্তরের সাথে চুক্তিবদ্ধ সদর উপজেলার ৭টি মিলের মালিক পক্ষকে সমহারে ছাঁটাইয়ের জন্য প্রদান করেছে বলে দেখায়। সরকার ছাটাইয়ের জন্য মিল মালিকদের টনপ্রতি পরিবহন খরচ ১৫০০ টাকা ও ছাঁটাই খরচ ১২০০ টাকা বরাদ্দ দেয়। এ হিসাবে সংগৃহিত আমন ধান ছাঁটাই ও পালিশ করে পুনরায় গোডাউনে জমা দেয়ার জন্য মোট বরাদ্দ ৪৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা উক্ত ৭টি মিলের মালিকদের বরাদ্ধ দিয়েছে বলে উল্লেখ করে। আর খাদ্য গোডাউন রক্ষক সংগৃহীত ধান বস্তাজাত করার জন্য মিল মালিকদের প্রতিপিচ ৮০ টাকা মূল্য দরে খাদ্য বিভাগের সিল সম্বলিত ৬লাখ ৪০হাজার টাকা মূল্যের অনুকুলে ৮হাজার পিচ বস্তা সরবারহ করে বলে সূত্রে জানায়।
সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, খাদ্য বিভাগের সংগৃহীত ১৫শ ৯২ মে.টন আমন ধান ছাঁটাইয়ের জন্য কাগজ-কলমে ৭টি তালিকাভূক্ত মিল মালিককে সমহারে বরাদ্ধ দেখিয়ে উক্ত সিন্ডিকেট বাইরের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেছে। সদর উপজেলা, নলছিটি, কাঠালিয়া ও আশেপাশের এলাকা থেকে ওএমএস, টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নিম্নমানের চাল কালোবাজারে কম মূল্যে ক্রয় করে সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে। পুরনো ধানের চাল টনপ্রতি ১৯/২০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও নতুন আমন ধানের চাল টনপ্রতি ৩৫/৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এভাবেও উক্ত সিন্ডিকেট মধ্যস্বত্তভূগী হিসাবে টনপ্রতি ১৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ায় ১৫শ ৯২মে.টন নতুন আমন ধান থেকে প্রায় ২কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, সংগৃহিত ধান ছাঁটাই ও পালিশ করে পুনরায় গোডাউনে জমা দেয়ার জন্য সরকার টনপ্রতি ২৭শ টাকা বরাদ্ধ করায় মোট ১৫শ ৯২ মে.টন আমন ধান ছাটাই ও পরিবহনে বরাদ্ধ দিয়েছে ৪৩ লক্ষাধিক টাকা। সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্র ওএমএস, টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ডিও লেটার কিনেগোডাউনের মালইগোডাউনে সাপ্লাই দেখিয়ে বরাদ্দের প্রায় পুরো টাকাই নিজেদের পকেটস্থ করছে। তাছাড়া খাদ্য গোডাউন রক্ষক উক্ত আমন ধানের চাউল সঠিক ভাবে রাখতে প্রতিপিচ ৮০ টাকা দরের ৬লাখ ৪০হাজার টাকা মূল্যের ৮হাজার পিচ খাদ্য বিভাগের সিলযুক্ত মজবুত ও টেকসই বস্তা সরবারহ করলে কিন্তু অর্থলোভী সিন্ডিকেট সেই বস্তা চরা মূল্যে বিক্রি করে কম দামে নিন্মমানের খাদ্য বিভাগ ও রাইচ মিলের সিল-সাপ্পরহীন বস্তায় পচা লাল চাউল সরবরাহ করছে বলে জানাগেছে।
এ ব্যাপারে খাদ্য গোডাউন রক্ষক গাজী মাজাহারুল আনোয়ার জানায়, ৪জুন শনিবার মেসার্স লিটন এন্টারপ্রাউজ রাইচ মিলের প্রতিনিধি মোঃ আক্কাস আলী ১৩মে.টন ২শ ৯কেজি চাউল সরবারহ করেছে। আমি ওজন করে ও ছাটাইকারী মিল মেসার্স লিটন রাইস মিলের সিলযুক্ত বস্তায় ভরা চাউল বুজে রেখেছি। এই ধান তো ছাটাইয়ের জন্য বাগেরহাট-খুলনা পাঠানো হয়েছিল বলে গত ২৫ জুন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আঃ সালাম জানিয়েছে তাহলে স্থানীয় মিলের সিল কেনো প্রশ্নে বলেন, এটা তিনি ভালো জানেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এপর্যন্ত ১৫শ ৯২মে.টন আমন ধানের মধ্যে মিল মালিকরা প্রায় সাড়ে ৯শ মে.টন চাউল সরবারহ করেছে, তবে সরবরাহকৃত চাউলের সাথে খাদ্য বিভাগের ইন্সেপেক্টরের প্রত্যয়নপত্র ছিলনা। মিল মালিকরা সরবরাহকৃত চাউল পচা, নিন্মমানের সরবারহ করে থাকলে তার দায়িত্ব কে নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইন্সেপেক্টর পদ শূন্য তাই নিজ দায়িত্বে চাউল বুঝে রেখেছেন।
Leave a Reply